ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্টিভেন উইলকিনসন’এর লেখা এই বইটার কথা শুনেছিলাম শেখর গুপ্তার দ্য প্রিন্ট’এর “ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট” সিরিজে বাবু জগজীবন রামের ওপরে একটা YouTube ভিডিওতে – তারপরে সেটা নিয়ে একটু গবেষণা করতে গিয়ে মনে হয় বইটা পড়েই ফেলি।
বেসিক প্রেমিস-টা সোজা। ইংরেজ শাসন থেকে বিংশ শতাব্দীতে বেরিয়ে আসা প্রায় সমস্ত দেশ’ই কোনো না কোনো সময়ে সামরিক একনায়কতন্ত্রের অধীন থেকেছে, আর বেশির ভাগ দেশেই গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের তুলনায় সেনাবাহিনী বেশি ক্ষমতাধর – কূ এর ঘটনাও খুব’ই স্বাভাবিক। এর মূল কারণ হলো যে ব্রিটিশেরা তাদের দেশীয় সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলে একটা ‘Divide and rule’ পদ্ধতিতে, যেখানে দেশীয় সৈন্যবাহিনীতে শুধু দু-তিন ধরণের martial races দেরকেই প্রাধান্য দেয়া হতো। সেজন্যই, স্বাধীনতার পরে এই টাইপের সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এবং প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতো না – পরিনাম : সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মতভেদ। ন্যাচারালি একটা নতুন তৈরী হওয়া দেশের গণতান্ত্রিক সরকার প্রথম দিকে কিছুমাত্রায় দুর্বল হয়, কিন্তু সৈন্যবাহিনী তো আর দুর্বল থাকে না … সেই থেকেই আসে সামরিক একনায়কতন্ত্র।
ভারতে কিন্তু সামরিক একনায়কতন্ত্র কখনোই হয় নি। ভারতের গণতান্ত্রিক সরকার যে সবসময় শক্তিশালী ছিল তা কিন্তু নয়। যদিও সহ-সৃষ্ট দেশ পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর জাতীয় শাসন ব্যবস্থায় disproportionate রকমের প্রভাব রয়েছে। এক দেশে সেনাবাহিনী রাজনীতি থেকে দূরে থেকেছে, অন্য দেশে সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। বার্মায়, বাংলাদেশেও সামরিক একনায়কতন্ত্র এসেছে। ঘানা, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়াতেও। তাহলে ভারত ব্যতিক্রমী কেন? এই প্রশ্নর’ই উত্তর দেয়ার চেষ্টা করে এই বই।
ভারী, জ্ঞানগর্ভ, একাডেমিক বই – কিন্তু অনেক কিছুই জানতে পারলাম। কোনো সোজা উত্তর নেই – আর না হওয়াই স্বাভাবিক। It’s essentially the same populace – এক’ই ইতিহাস, এক’ই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সময় নিয়ে পড়ার মতন বই – খান’কয়েক পয়েন্ট এবং হাইলাইট দিলাম নিচে।
১. দুই দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের সামাজিক ভিত্তি : ভারতজুড়ে কৃষক ও মধ্যবিত্তের একটি বড় অংশ কংগ্রেসকে সমর্থন করতো (অল থ্যাংকস টু দ্য গ্রেট ন্যাংটাবুড়ো অভ কোর্স)। নেহেরুর কংগ্রেস চরিত্রগতভাবে সচেতনভাবে ডেমোক্রেটিক ছিল, বিভিন্ন ভাষাগত ও জাতিগত গোষ্ঠীকে যথাযথ প্রতিনিধিত্ব দিত (হাঃহাঃ সে কংগ্রেস তো আর আজকের কংগ্রেস পারিবারিক লিমিটেড কোম্পানি নয়)।
অন্যদিকে, মুসলিম লীগের একটি অভিজাত এলিট বেস ছিল, বড় জমিদার ও সমাজের এলিটশ্রেণীর লোকজনের সমন্বয়ে তৈরী – যারা কখনোই সমাজের মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত শ্রেণীর রিপ্রেসেন্টেটিভ হয়ে ওঠেনি। সেজন্যই পাকিস্তানি জনসাধারণের কাছে মুসলিম লীগ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর counterweight হয় ওঠেনি।
২. ব্রিটিশরা যদিও martial race এর ভিত্তিতে divide and rule করেছিল পুরো অবিভক্ত ভারতেই, দেশভাগের পরে পাকিস্তানের ভাগ্যে যে সেনাবাহিনীটা পড়ে থাকে সেইটা একটু বেশি অসমান হয়ে গেছিলো ভারতের তুলনায়। পাঞ্জাবি মুসলমানরা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ৭০%এর’ও বেশি ছিল – আর এখনো হয়তো সেরকম’ই আছে। ভারতেও পাঞ্জাবি শিখ এবং হিন্দুদের ভাগও অন্যদের তুলনায় বেশি ছিল – প্রায় ২০% – কিন্তু not overwhelmingly so ।
৩. ইতিমধ্যে, স্বাধীনতার পরের থেকেই ভারত সরকার দেশের অন্যান্য অংশ থেকে লোক নিয়ে সেনাবাহিনীকে ‘rebalance’ করার চেষ্টা শুরু করেছিল। আর সাধারণ জীবনযাপনে সেনাবাহিনীর স্ট্যাটাসকে সামান্য একটু ক্ষুন্ন করা। (একটা কথা বলে রাখি: এই শেষের ব্যাপারগুলো যে কখনো counterproductive হয়নি তা নয় – নেহেরুর অধীনে কৃষ্ণমেনন বেশ দুর্বল প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন এবং তাঁর অধীনে ভারতের সামরিক শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে ওঠে, এবং ভারত চীনের বিরুদ্ধে 1962 সালের যুদ্ধে হেরে যায় – যশোবন্তরাও চবন, আর তারপরে জগজীবন রাম এসে তার পুনরুজ্জীবন করেন)।
বোকাবোকা simplistic সোজা উত্তর পাবেন না এই বইটিতে।
বিশ্বের কোনো গণতন্ত্রই ঠিক অন্য আরেকটা দেশের মতো একইরকম গণতন্ত্র নয় – কিন্তু ভারতের গণতন্ত্র মৌলিকভাবে শক্তিশালী, এবং এর একাধিক কারণ রয়েছে। এই বইটি এর একটি ধারার বিশ্লেষণ করে।
পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম।